রংপুর নগরীর কামাল কাছনা এলাকার বাসিন্দা ও লাকীপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আছগর আলী। ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নীলফামারী জেলার বাসিন্দা নাট্যকার হিসেবে পরিচিত ইভান মল্লিক ওরফে উৎপল রমজানের ফজিলত সংক্রান্ত কিছু আলোচনা করার জন্য একটি মসজিদে দাওয়াত করেন মাওলানা আছগর আলীকে।

এসময় বলা হয়, তার এই আলোচনা রেকর্ড করা হবে এবং রমজান মাসে ইফতার ও সেহরির পূর্বে ইউটিউব ও আনন্দ টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে। সরল বিশ্বাসে পেশ ইমাম মাওলানা আছগর আলী রাজি হয়ে মসজিদে আলোচনা করলে ইভান মল্লিক তা ভিডিও করেন। এর প্রায় তিন মাস পর বেশ কিছু মুসল্লি আনন্দ টিভি, প্রবাসী বাংলা টিভিসহ ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পান, মাওলানা আছগর আলীকে ফয়েজ উদ্দিন চিশতি, খানকায়ে শেফা দরবার শরীফ, হবিগঞ্জ, সিলেটের সকল সমস্যার সমাধানকারী তান্ত্রিক হুজুর হিসেবে উপস্থাপন করে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়। উক্ত বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অসংখ্য সরল মানুষ বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে বিকাশের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা প্রেরণ করে প্রতারিত হন।

এ বিষয়ে ওই ইলেকট্রনিক চ্যানেলসমূহে যোগাযোগ করে কোনো প্রতিকার না পেয়ে মাওলানা আছগর আলী বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইব্যুনাল ঢাকায় কথিত নাট্যকার ইভান মল্লিককে বিবাদী করে পিটিশন মামলা (নং-৪৯৮/২০২০ খ্রিঃ, ধারা- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২২/২৩/২৪/২৫/২৮/২৯/৩১/৩৫/৩৭) দায়ের করলে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি পিবিআই, রংপুরকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করেন। প্রায় ৬ মাস নিবিড় ও প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত করে ডিজিটাল মাধ্যমে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ধর্মভীরু মানুষদের প্রতারিত ও নিঃস্ব করার মূল চক্রকে শনাক্ত করে রংপুর পিবিআই। পিবিআই রংপুর জেলার পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, উক্ত চক্রের মাস্টারমাইন্ড এসএফ মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড, ঢাকা’র স্বত্ত্বাধিকারী ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানার ফুলকাচিয়া কঞ্জুরহাট এলাকার বাসিন্দা শেখ ফরিদ (৩১)।

টাকার বিনিময়ে বিবাদী ইভান মল্লিকের মাধ্যমে ভিডিওচিত্র ধারণ করে পরবর্তীতে তা এডিট করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক চ্যানেলে প্রচার করেন এবং খানকায়ে শেফা দরবার শরীফ থেকে রোগ, শোক, প্রেমে ব্যর্থতা, অবাধ্য সন্তান বশীকরন, চাকরিতে পদোন্নতি, বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ, বিদেশে লটারি লাভ ও অমূল্য ধন-সম্পদ অর্জন প্রভৃতি কাজের জন্য বেশ কিছু মোবাইল নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে নগদ টাকা উত্তোলন করেন। পিবিআই রংপুর তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করে মূল হোতা শেখ ফরিদ ও তার অন্যতম সহযোগী ইভান মল্লিক, জাফর ইকবাল কাজল ও সাজনা বেগমের সম্পৃক্ততাসহ ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে। তাদের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনাল ঢাকায় পিবিআই, রংপুর প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলেও জানান তিনি।